বেকিং এর জন্য বেকিং পাউডার এবং বেকিং সোডা ২ টাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনেকেই ২ টার পার্থক্য নিয়ে কনফিউশান এ থাকেন। কোন টা কোন কাজে ব্যবহার করা হয় এইটা নিয়েও অনেকের মনে প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। তাই আজ আপনাদের সাথে বেকিং পাউডার এবং বেকিং সোডা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব
বেকিং সোডা এবং বেকিং পাউডার কি?
বেকিং সোডা কি?
বেকিং সোডা হলো সোডিয়াম বাইকার্বোনেটের মিহি গুড়া। এটি একদমই র অবস্থায় থাকে। এটি ক্ষারীয়। এর সাথে কোন প্রকার এসিড মিশ্রিত থাকেনা। এটি যখনই অন্য কোনো এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে তখনই কার্বন-ডাই-অক্সাইড তৈরি করে। ফলে বুদ বুদ সৃষ্টি করে।
বেকিং পাউডার কি?
বেকিং পাউডার মূলত বেকিং সোডা থেকেই তৈরি করা হয়। বেকিং সোডার সাথে ড্রাই এসিড মিলিয়ে বেকিং পাউডার তৈরি করা হয়। সাধারনত ক্রিম অফ টারটার মিশিয়ে বেকিং পাউডার তৈরি করা হয়। এতে করে এটি সফট হয়। যেহুতু এতে আগে থেকেই এসিড দেওয়া থাকে তাই যেকোনো খাবারে এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে খুব দ্রুত নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় না।
বেকিং সোডা কোথায় ব্যবহার করা
সাধারনত খাবারে বুদ বুদে ভাব আনার জন্য বেকিং সোডা বযবহার করা হয়। এটি খুব দ্রুত বিক্রিয়া করে ফেলে। লেবু পানি, টক দই, বাটার মিল্ক, চকলেট ইত্যাদিতে বেকিং সোডা ব্যবহার করা হয়।
বেকিং পাউডার কোথায় ব্যবহার করা হয়-
বেকিং পাউডারে মূলত বেকিং সোডাই থাকে। তবে তার সাথে আরো কিছু রাসায়নিক উপকরণ যোগ করে বেকিং পাউডার বানানো হয়। যা শুরুতেই বলেছি। মূলত বেকিং সকল আইটেম বনানোর জন্য বেকিং পাউডার ব্যবহার করা হয়। যেমন- ব্রেড/ পাউরুটি, কেক, প্যানকেক, পিঠা ইত্যাদি।
বেকিং সোডা এবং বেকিং পাউডার এর পার্থক্যঃ-
১। বেকিং পাউডার এবং বেকিং সোডা যেহুতু বিক্রিয়া করে কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি করে তাই দুইটাই মূলত খাবার ফুলতে সাহায্য করে। তবে বেকিং সোডা খুব দ্রুত বিক্রিয়া করে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় ফলে বেকিং পাউডার ব্যবহার করা হয় বেকিং জাতীয় আইটেম তৈরিতে।
২। বেকিং সোডাতে পিওর সোডিয়াম বাই কার্বোনেট থাকে। কিন্তু বেকিং পাউডারে বেকিং সোডা এবং আরো কিছু রাসায়নিক উপাদান থাকে।
৩। বেকিং পাউডারের কাজ কখনো বেকিং সোডা করবেনা। তাই দুইটার ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে।
বেকিং পাউডারের বদলে বেকিং সোডা ব্যবহার-
বেকিং পাউডার হাতের কাছে না থাকলে বেকিং সোডা ব্যবহার করা যায়। কিভাবে চলুন দেখে নেই-
১। বেকিং সোডার সাথে টারটার ক্রিম ব্যবহার করে খুব সহজেই বেকিং পাউডার বানানো যায়।
২। ডিমের সাদা অংশের সাথে বাকিং সোডা ব্যবহার করলে কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি হয়।
৩। ৩ চা চামচ বেকিং পাউডারের বদলে ১ চা চামচ বেকিং সোডা ব্যবহার করা যায়। বেকিং সোডা অতিরিক্ত ব্যবহার করলে খাবার বিস্বাদ লাগে এবং গলায় লাগে।
বেকিং সোডার বদলে বেকিং পাউডারের ব্যবহার
বেকিং সোডার বদলে বেকিং পাউডার ব্যবহার করা যায়। কিভাবে চলুন দেখে নেই-
১। বেকিং পাউডার ৩ গুন বেশি দিয়ে বেকিং সোডার কাজ করা যায় তবে সেক্ষেত্রে গ্রেভি বেশি ঘন হয়ে যাবে। কারন এতে কর্ণ স্টার্চ ব্যবহার করা হয়।
২। ডিমের সাদা অংশের সাথে বাকিং পাউডার ব্যবহার করলে কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি হয়। এটি দিয়ে প্যাঙ্কেক, পাউরুটি বানানো সহজ হয়।
৩। ১ চা চামচ বেকিং সোডার বদলে ৩ চা চামচ বেকিং পাউডার ব্যবহার করা যায়।
সংরক্ষণ
বাজার থেকে কিনে আনা বেকিং পাউডার সাধারনত ২ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে। কিন্তু একবার আনপ্যাক বা মুখ খোলার পর সর্বোচ্চ ৬ মাস ভালো থাকে। বেকিং সোডার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। মুখ না খুললে এটি ২ বছর পর্যন্ত সংরক্ষন করতে পারবেন আর মুখ খুললে ৬ মাসের মধ্যেই এটি কার্যকারীতা হারায়।
বেকিং পাউডার এবং বেকিং সোডা সাধারনত বাতাসের সংস্পর্শে আসলে দলা পাকিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। তাই বাতাস ঢোকা থেকে রক্ষা করলে অনেক দিন পর্যন্ত ভালো থাকে। আসলে বেকিং হলো সাইন্স। তাই বেকিং এর সাইন্স টা বুঝলে বেকিং অনেক সহজ হয়ে যায়।
সমাপনী
বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বেকিং পাউডার এবং বেকিং সোডা কিনতে পাওয়া যায়। চেষ্টা করবেন মেয়াদ দেখে বেকিং পাউডার এবং বেকিং সোডা কেনার এবং সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করার। আর অবশ্যই যেই রেসিপিতে বেকিং পাউডার ব্যবহার করতে বলা হয় সেখানে বেকিং পাউডার এবং যেখানে বেকিং সোডা ব্যবহারবকরতে বলা হয় সেখানে বেকিং সোডাই ব্যবহার করবেন। একটার বদলে আরেকটা ব্যবহার করলে সঠিক রেজাল্ট নাও আসতে পারে। তাই অবশ্যই বিষয়টি লক্ষ্য রাখবেন।
প্রশ্নোত্তর
বেকিং পাউডার এবং বেকিং সোডা কি এক জিনিস?
না। বেকিং পাউডার এবং বেকিং সোডা এক জিনিস নয়। ২ টার কাজ আলাদা।
বেকিং সোডার কি রাসায়নিক সংকেত কি?
বেকিং সোডার রাসায়নিক নাম হলো- সোডিয়াম বাই কার্বনেট। সংকেত- NaHCO3
বেকিং পাউডার এবং বেকিং সোডার মধ্যে পার্থক্য কি?
বেকিং সোডা হলো সোডিয়াম বাইকার্বোনেটের মিহি গুড়া। এবং বেকিং পাউডার মূলত বেকিং সোডা থেকেই তৈরি করা হয়। বেকিং সোডার সাথে ড্রাই এসিড মিলিয়ে বেকিং পাউডার তৈরি করা হয়।