রান্নাঘরের প্রয়োজনীয় ৬ টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস
আমাদের কর্মব্যস্ততার মাঝে সারাদিন খুব অল্প সময় থাকে রান্না করার জন্য। এই অল্প সময়ের মধ্যে সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর রান্না করাটাই হলো স্মার্ট কুকিং।
বর্তমানে অধিকাংশ নারী বিভিন্ন কাজে নিজের মূল্যবান সময় ব্যয় করে। তাই আগের দিনের নারীদের মতো এত সময় তারা রান্না ঘরে ব্যয় করতে পারেনা। ফলে সব কাজ এক হাতে করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। তো চলুন দেখে নেই রান্নাঘরের এমন ৬ টি টিপস যা আপনার কাজকে সহজ করে দিবে।
১। রান্নার আগে রান্নাঘর পরিস্কার করে নেওয়াঃ
চেষ্টা করবেন রান্নার আগে সমস্ত কাটাকাটি এবং ধোয়ার কাজ শেষ করে রাখতে। এছাড়াও চু্লা মুছে এবং তাক গুলো মুছে নিলে রান্না করতেও বেশ ফ্রেশ ফ্রেশ লাগবে। আর পরিস্কার রান্না ঘরে রান্না করার মজাই আলাদা। তখন রান্নায় যেমন মন বসে তেমনি রান্না করেও তৃপ্তি পাওয়া যায়।
এছাড়া, রান্নার সময় সঠিক স্থান ও পরিবেশে কাজ করা সহজ হয়। পাশাপাশি, রান্নাঘরের সব পৃষ্ঠ মুছে ফেলা এবং খাবারের বর্জ্য পরিষ্কার করা মশা ও পোকামাকড়ের উপদ্রব কমায়। সুতরাং, একটি পরিচ্ছন্ন রান্নাঘর স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ খাবারের জন্য অপরিহার্য।
২। আগের দিন রাতেই ভেবে রাখুন পরেরদিন কি কি রান্না হবেঃ
প্রতিদিন সকালে উঠে গৃহিনীদের কমন একটা চিন্তা হলো আজকে কি রান্না হবে? আগামীকাল কি রান্না হবে এইটা যদি আগের রাতেই ভেবে রাখা যায় তাহলে দেখবেন পরেরদিন কাজ অনেকটাই এগিয়ে থাকবে। কারন অনেকসময় শুধু চিন্তা করতে করতেই অর্ধেক বেলা চলে যায়। এতে রান্নার যোগার করতেও দেরি হয়ে যায়। তাই আগের রাতেই চিন্তা করে নিন পরের দিন কি রান্না করবেন।
শুধু দুপুরের নয় বরং সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কি কি রান্না হবে আগের রাতেই চিন্তা করে রাখলে দেখবেন কাজ অনেক সহজ হবে। আর যাদের ছোট বেবি আছে তারা আগের রাতেই ঠিক করে রাখবেন কাল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাচ্চাকে কি কি খেতে দিবেন।
সম্ভব হলে আগামীকালের কিছু কাজ রাতেই করে রাখুন। যেমন সবজি কাটা, মসলা করা, শাক বেছে রাখা ইত্যাদি। এতে করে দেখবেন পরের দিনের কাজগুলো অনেক সহজ হয়ে যাবে।
৩। কি কি রান্না হবে তার সব আইটেম আগে থেকেই রেডি করে রাখাঃ
ঘুম থেকে উঠতে যদি দেরি হয়ে যায় তাহলে সবার আগে মাছ মাংস ফ্রিজ থেকে বের করে নিন। অর্থাৎ আজকে যেটি রান্না হবে সেটি বের করে নিন। এতে করে সকালের খাবার খেতে খেতেই মাছ মাংস নরম হয়ে যাবে।
যেহুতু কি রান্না হবে আগে থেকেই ঠিক করা তাই সকালে উঠেই যদি রান্নার উপকরণ গুলো রেডি করে নেওয়া হয় বা ফ্রিজ থেকে বের করে নেওয়া হয় তাহলে সকালের নাস্তা খেতে খেতে মাছ মাংস নরম হয়ে যাবে এবং রান্নার প্রস্তুতি শুরু করা যাবে। কিন্তু মাছ মাংস ভেজাতে দেরি হলে দেখা যাবে নরম হতে হতে রান্নায় অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। এতে করে রান্না দেরি হয়ে যাবে।
একেবারে বেশি করে পেয়াজ রসুন আদা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় মসলাগুলো সিদ্ধ করে পেস্ট করে নিয়ে ফ্রোজেন করে রাখতে পারেন। আরো ভালো হয় যদি ভাগ ভাগ করে রাখা যায়। এতে করে প্রয়োজনীয় পরিমানে নিয়ে প্রতিদিনের রান্নাটা খুব অল্প সময়ের মধ্যে করা সম্ভব।
৪। মশলা ডীপ ফ্রিজ থেকে বের করে নেওয়াঃ
প্রয়োজনীয় মশলাপাতি ডীপ ফ্রিজে থাকলে তা আগেই বের করে নেওয়া উচিৎ তাহলে নরম হয়ে যাবে এবং রান্নায় সহজেই ব্যবহার করা যাবে।
অনেক সময় দেখা যায় ডীপে মশলা আছে কিন্তু বের করতে মনে নেই। সেক্ষেত্রে রান্না তুলে দেওয়ার পর মনে পড়লে ডীপ থেকে বের করে সাথে সাথে ব্যবহার করা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। তাই মনে করে অবশ্যই আগে বের করে নিবেন।
আবার আমি একটা কাজ করি আপনারা চাইলে এই পদ্ধতিও ফলো করতে পারেন। আদা রসুন বাটা মিক্স করে একটা বড় পাত্রের মধ্যে ডিপ ফ্রিজে রাখি। এবং ছোট একটি কৌটাতে অল্প পরিমাণে নিয়ে সেইটা ফ্রিজের নরমাল চেম্বারে রেখে দেই।
এতে করে প্রতিবার রান্নার সময় শুধু নরমাল ফ্রিজ থেকে মশলা বের করেই রান্না করতে পারি। আর ৩-৪ দিন পর পর ছোট কৌটাতে ডিপ ফ্রিজ থেকে বের করে রিফিল করে নেই। এভাবে ডিপ ফ্রিজে আপনার মসলাগুলো এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত ভালো থাকবে এবং নরমাল চেম্বারে ৫-৬ দিন রেখে আরামসে খেতে পারবেন।
৫। একসাথে ২-৩ টা কাজ না করাঃ
একসাথে ২-৩ টা কাজ না করে একে একে প্রত্যেকটা কাজ পারফেক্টলি করাই শ্রেয়। এতে কাজে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে এবং কাজ গোছানো হয়।
একটা কাজে ভুল হলে দেখা যায় প্রতিটা কাজেই তার প্রভাব পড়ে। তাই একটি কাজ পারফেক্ট হলে বাকি গুলোও ভালোভাবে সম্পন্ন হবে। এজন্য প্রতিটি কাজেই সমান মনোযোগ দিয়ে ভালো ভাবে করা উচিৎ।
যেমন- একসাথে ২ টা রান্না করতে করতে যেয়ে অনেক সময় রান্না পুড়ে যায় বা মশলার হেরফের হয়ে যায়। অথচ একটা একটা করে রান্না করে নিলে দেখবেন ফুল মনোযোগ দিয়ে করতে পারছেন এবং রান্নায় ভুল হচ্ছেনা। তবে যারা রান্নায় এক্সপার্ট তারা সময়ের অভাবে একসাথে অনেক কাজ করতে পারেন।
৬। একেবারে দুইবেলার রান্না করাঃ
দুপুরের রান্নার সময় একবারেই যদি রাতের রান্নাটাও করা যায় তাহলে দেখা যাবে রাতে আর রান্নাঘরে যেতে হবেনা। সেক্ষেত্রে চাইলে একই আইটেম দিয়ে দুপুরে এবং রাতের খাবার করতে পারেন, আবার চাইলে আলাদা আইটেমও করতে পারেন।
একবারে রান্না করে নিলে বেশ কিছু সুবিধা পাবেন। যেমন- একটা রান্নার যোগার করার সাথে সাথে ২ টা রান্নার যোগাড় করে নেওয়া সহজ৷ কিন্তু আলাদা আলাদা ভাবে রান্নার যোগাড় করতে গেলে ২ বেলাতেই সময় নষ্ট হবে।
আর খাবারে যদি হাত না দেন তাহলে অই খাবার ফ্রিজেও রাখতে হবেনা। দুপুরে রান্না করা খাবার রাতেও একদম ভালো থাকবে।।
যদি একটি তরকারি দিয়েই দুইবেলা খেতে চান তাহলে অবশ্যই রান্না করার পর সাথে সাথে একটি এয়ারটাইট বক্সে করে অর্ধেক খাবার তুলে রাখুন এতে করে খাবারের স্বাদ অটুট থাকবে।
আর একাধিক তরকারি রান্না করে একটি রাতের জন্য রেখে দিতে চাইলে- ৮০% রান্না করে না' হাত দিয়ে ওই অবস্থাতেই রেখে দিন। রাতে ২০% রান্না কম্পলিট করে নিয়ে খাবেন- দেখবেন একদম ফ্রেশ রান্নার মত স্বাদ পাবেন।
পরিসমাপ্তি :-
মোট কথা হল বর্তমান জীবনে রান্না করার জন্য সারাদিন সময় নষ্ট করা অনেকটাই কষ্টসাধ্য। তাই কাজ কমিয়ে নিয়ে একটু স্মার্টলি চললেই কিন্তু আপনি অল্প সময়ে অনেক আউটপুট পেতে পারেন।
আমাদের স্মার্ট কুকিং পেইজ এবং চ্যানেল এর সব সময় চেষ্টা থাকে আপনাদের কাজকে কিভাবে সহজ করা যায় এবং স্মার্টলি হ্যান্ডেল করা যায় তার পরামর্শ প্রদান করা।